ডি এম কপোত নবী, নিজস্ব প্রতিবেদক : মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবন বাজি রেখে দেশকে মুক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। নিজ রাষ্ট্রকে বাঁচাতে নিজের জীবনের চিন্তা করেননি তাঁরা। রাষ্ট্রকে ফিরিয়ে নিয়েছেন পাক হায়নাদের ছোবল থেকে। দেশের উন্নয়নকে কেউ দাবায়া রাখতে পারেনি। শক্ত হাতে হাল ধরে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়কের সুযোগ্য কণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেয়ার সব চেষ্টা অব্যহত রেখেছেন।
বঙ্গবন্ধুর আর্দশের সৈনিক চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যু জাকির হোসেন। তিনিও স্ত্রী সন্তান ও নিজের কথা চিন্তা না করে দেশ স্বাধীনের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দেশ স্বাধীন হয়েছে, সুন্দর একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। দেশে মানুষ স্বাধীন ভাবে চলা ফেরা করছেন। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধা আজ আর বেঁচে নেই। তাঁর সন্তানেরা থাকলেও অনাহারে অর্ধাহারে অপরের বাড়ীতে কাজ করে সংসার চালায়। তিনি নিজেও সহায় সম্বলহীন থেকে মানবেতর জীবন-যাপন করে মারা গেছেন।
কথা হয় তার অসহায় বিধবা মেয়ে লিপি বেগমের সাথে। লিপির বয়স ৪৩ হবে। বাবা নিজ হাতে মেয়ের সুখ শান্তির কথা চিন্তা করে বিয়ে দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার তেলীপাড়া গ্রামের জসিমুদ্দিনের সাথে। বিয়ের পর স্বামী সংসার চলতে থাকে। দিন কয়েক চলতেই লিপি বুঝতে পারেন স্বামী নেশা পানের সাথে জড়িত। নেশার টাকার জন্য সংসারে ঝুটঝামেলা চলতে থাকে। এমন সময় তার পেটে সন্তান আসে। কন্যাসন্তান জেয়াসমিন খাতুনের জন্ম হয়। পর পর আরো ২টি কন্যাসন্তানের মা হন তিনি। সংসারের অভাব অনটন চলতে থাকলে তার কন্যাসন্তানদের পড়া-লেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে।
বাধ্য হয়ে লিপি বেগম চলে যান তার বাবার বাড়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ১৫ ওয়ার্ড মসজিদ পাড়ায়। বাবার অল্প জায়গায় তাদের বসবাস অনুপযোগি বাড়ীতে থাকতে গিয়ে এক সময় ভারি করে বসেন তার বাবার পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে। এদিকে তার আয়ের উৎসা না থাকায় ধুকে ধুকে চলতে থাকে জীবন।
এক সময় চরম হতাশায় কি করবেন চিন্তা ভাবনায় পড়ে যান তিনি। বাধ্য হয়ে কম ভাড়ায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে ৩ কন্যাসন্তানকে নিয়ে অন্যের বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে স্বামী জসিমুদ্দিন(২০১৫ সাল) মারা যান। পর পর বাবাও মারা যান। অন্ধকার পৃথিবী যেন তাকে কুঁরে কুঁরে খাওয়া শুরু করে। অন্ধকার পৃথিবীতে তার বেঁচে থাকার পথ খোলা ছিলো না। অন্যের দরজায় দরজায় ঘুরে ঝিয়ের কাজ সংগ্রহ করেন।
ঢালতালোয়ার বিহীন এ যোদ্ধার লড়াই কত কঠিন বলতে বলতে ঢুঁকরে ঢুঁকরে কেঁদে ফেললেন লিপি বেগম। কেঁদে কেঁদে বললেন, পাশে দাঁড়ানোর কেউ নাই একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। ছোট ছোট ৩টি মেয়ে নিয়ে লড়াইটা খুব কষ্টের। তারপরও তাদের পড়া-লেখা চালিয়ে যায়। বড় মেয়ে জেয়াসমিন খাতুন পাশ করেছেন স্নাতক ডিগ্রী, মেজ মেয়ে সায়েমা খাতুন কেয়া এইচএসসি পাশ করে অর্থাভাবে থমকে গেছেন। ছোট মেয়ে সুবর্ণা খাতুন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারী কলেজে এইচএসসিতে পড়া-লেখা করছেন।
লিপি বেগম বলেন, অর্থাভাবে এ মেয়েরো হয়তো কখন পড়া-লেখা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অন্যের বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করে যে টাকা পায় তাতে বাড়ী ভাড়া আর খাওয়াতে শেষ হয়ে যায়। মেয়ের পড়া-লেখা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
তিনি আক্ষেপ করে কেঁদে কেঁদে বলেন, তার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার বাবাও শেষ পর্যন্ত সুযোগ বঞ্চিত অবস্থায় ৮ বছর পূর্বে মারা যান। তাঁর মেয়ে লিপি দীর্ঘদিন ধরে ৩ কন্যাসন্তানকে নিয়ে অন্যের বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে ঝিয়ের কাজ করে পাড়াশুনা শিখিয়ে আজ পর্যন্ত সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা না পেয়ে চরম মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পিতার স্বপ্ন পূরণে মানুষকে অনেক সুযোগ-সুবিধা দিলেও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে হিসেবে সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা আজ পর্যন্ত তার ভাগ্যে জুটেনি।
তিনি বলেন, বাড়ী থাকতেও অনেক মানুষ সরকার বাড়ী পাচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারী চাকরি পাচ্ছেন। কিন্তু আমার বাড়ী নাই। মাথা গুঁজার এক খন্ড জমি নাই। আমার মত সহায় সম্বলহারা বীর মুক্তিযোদ্ধার বিধমা মেয়ে ৩ কন্যাসন্তানের মা হিসেবে সর্বশেষ বাংলাদেশের একজন অসহায় নাগরিক হিসেবে মাথা গুঁজার ঠাঁই হিসেবে একটি বাড়ী ও মেয়েদের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকুরির জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন করেছেন ।