মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন

ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হচ্ছে টাকা

মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫, ২:৩১ পূর্বাহ্ন

অন্তর্বর্তী সরকারের মাত্র ১১ মাসের মধ্যে রেমিট্যান্স আহরণ এবং রপ্তানি আয়ের ফলে ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হয়েছে টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ দিনে বাংলাদেশি টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্য হ্রাস পেয়েছে। বেশির ভাগ ব্যাংক ডলার বিনিময় করেছে প্রতি ডলার ১২০.৩০ টাকা থেকে ১২১.২০ টাকায়। যেখানে গত সপ্তাহের শুরুতে ডলারের দর ছিল ১২২.৮০ টাকা থেকে ১২২.৯০ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেকর্ড ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এটি গত অর্থবছরের (২০২৩-২৪) ২৩.৯১ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২৬.৮০ শতাংশ বেশি। এই রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারাবাহিকতায়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসের প্রথম ১২ দিনে প্রবাসীরা প্রায় ১ হাজার ৭১ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।

এই সময়ে প্রবাসীদের প্রেরিত গড় দৈনিক রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৮৯.২৫ মিলিয়ন ডলার। যেখানে গত বছরের একই সময়ে দেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ ছিল ৯৪৮ মিলিয়ন ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয় ৮.৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮.২৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দেয় এবং ডলারের বিপরীতে টাকার শক্তিশালী হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করার পরও ডলারের দরপতন অব্যাহত রয়েছে এবং টাকার মান শক্তিশালী হয়েছে। তিনি বলেন, প্রায় ১১ মাস আগে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে এবং সর্বক্ষেত্রে পরিবর্তনের অঙ্গীকার করে। অর্থনীতি, প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন সংস্কারে বেশকিছু নীতি-ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং এর মাধ্যমে জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরির চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ডলারের বিনিময় হার কমে প্রায় ১২০ টাকায় এসেছে, যা একটি ইতিবাচক দিক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা বলেন, ডলারের দামের পতনের প্রধান কারণ সরবরাহ বৃদ্ধি। গত দুই বছরের মধ্যে এখন ডলারের সরবরাহ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, সরকার মূলধনী বাজারে মূল্য কারসাজি রোধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর বাইরে রপ্তানি ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা এই প্রবৃদ্ধিতে বড় অবদান রেখেছে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারকে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে থাকা দেশের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক স্বস্তি হিসেবে কাজ করছে।

নিলামে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনলো বাংলাদেশ ব্যাংক
প্রথমবারের মতো নিলামের মাধ্যমে রোববার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয় বাড়ার ফলে ডলারের দাম টাকার তুলনায় গত এক সপ্তাহ ধরে কমছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। এই ডলার কেনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি ডলারের দাম ১২১ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করেছে, যা বেশির ভাগ ব্যাংকের দেয়া প্রায় ১২০ টাকা দামের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম স্থির রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কিনেছে। তিনি বলেন, যদি ডলারের বিনিময় হার টাকার তুলনায় বেড়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক একইভাবে নিলামের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করবে। তিনি আরও বলেন, টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার যেন স্থির থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো সময় বাজারে হস্তক্ষেপ করতে পারে।


আরও সংবাদ
Theme Created By ThemesDealer.Com