হাবিবুল বারি হাবিব : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ-মনাকষা সড়কের পাগলা নদীর ওপর বেইলি ব্রীজটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন হলেও তার ওপর দিয়েই চলছে বিভিন্ন ধররেনর যানবাহন। ব্রীজের প্লেটগুলো বারবার দেবে যাওয়া ও সংযোগ ছুটে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ । কিন্তু প্রত্যেকবারই জোড়া-তালি দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ঝুঁকি নিয়েই চলছে এই ব্রীজটি । গত কয়েকদিন থেকে আবার একটি প্লেট ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেলে চরম ঝুঁকিতে পড়ে পথচারীরা। যেকোন মুহূর্ত্তেই ঘটতে পারে বড় ধরনের অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা । সরজমিনে শুক্রবার (৬ আগষ্ট) কালুপুর এই লোহার বেইলি ব্রিজে গিয়ে দেখা গেছে, ব্রিজটির স্টীলের পাটাতনগুলো নিদিষ্ট স্থান হতে সরে গেছে। নাট স্ক্রী সব ঢিলে হয়ে গেছে। কয়েকটি পাটাতন দেবে গেছে।
তার মধ্যে এক সাইডের একটি পাটাতন প্রায় ঝুলে নদীতে পড়ে গিয়ে বড় ধরনের ঝুঁকির সৃষ্টি করেছে। এ সড়কে চলাচলকারী অটো চালক জামাল উদ্দিন, হাকিম, দোয়েল, তোজাম্মেল হক, অটোরিক্সা চালক মনিরুল ইসলাম, স্ট্রিয়ারিং চালক স্বপন আলি, আমের সাইকেল ওয়ালা আ: আ: জলিল এবং আজিজুল হক সহ প্রায় ৪০-৫০ জন পথচারী ও বিভিন্ন যানবাহনের চালকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বিকল্প কোন পথ না থাকায় আমরা বাধ্য হয়ে এ ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের ওপর দিয়েই চলাচল করছি। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। তারা আরো বলেন, কানসাট হয়ে ঘুরে যাতায়াত করা যায়। তবে বর্তমানে আমের মৌসুম হওয়ায় অতিরিক্ত যানজট ও ভাড়া বেশী হওয়ায় যাত্রীর সেখান দিয়ে যেতে চাইনা। সাধারণ যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ ব্রিজটির ওপর দিয়ে মনাকষা, বিনোদপুর, শ্যামপুর, দূর্লভপুর সহ আরো কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ যাতায়াত করে। উপজেলার একমাত্র সরকারি আদিনা কলেজ সহ ৭/৮টি কলেজ ও ২০টি উচ্চমাধ্যমিক ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এ পথে যাতায়াত করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চাকরিজীবি বলেন, সারাদিন অফিস করে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফেরার সময় এ ব্রিজে কয়েকদিন দুর্ঘটনারা শিকার হয়েছি। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছি।
শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু আহমেদ মুক্তা, দূর্লভপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজিব রাজু, মনাকষা ইউপি চেয়ারম্যন খুররম চৌধুরীসহ আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের জোর দাবি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের।
উপজেলা প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ জানান, আমরা ব্রিজটি ইতিমধ্যে পরিদর্শন করেছি। সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ব্রিজের দুইদিকে সাইন বোর্ড টাঙানো হয়েছে। কিন্তু তারা কোন কথা কর্ণপাত করছে না। বরাদ্দ পেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে। তবে ব্রিজটি নির্মাণ করার সময় এটি সড়ক ও জনপথের অর্ন্তুভুক্ত থাকায় সঠিক তথ্য দিতে পারেনি।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বী জানান, ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করার জন্য। কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা হয়েছে। আশা করি খুব শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা আফরীন জানান, ইতিমধ্যে মাটি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।
শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, ইতিমধ্যে সংসদ সদস্যের সাথে আলাপ করেছি। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করে জনদুর্ভোগ দূর করা হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল জানান, ব্রিজটি ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। এখন শুধু একনেকের অনুমতি পেলেই কাজ শুরু হবে।
উল্লেখ্য, জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে শিবগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা প্রয়াত ডা. মইন উদ্দিন আহম্মেদ মন্টু ডাক্তারের উদ্যোগে সম্ভব্য ১৯৮৬ সালে ব্রীজ নির্মানের কাজ শুরু হয়েছিল এবং ১৯৮৮ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল। ব্রিজটি দীর্ঘ হলো ১৫০ মিটার ও প্রস্থ হলো ১২ ফিট।